পেশিতে টান লাগলে কি করবেন:
পায়ের পেছনের দিকের মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথার কারণে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। প্রচলিত ভাষায় বলতে গেলে এ অবস্থাকে বলা যায় রগে টান খাওয়া। হাঁটু আর গোড়ালির মাঝের পেশি (কাফ মাসল) প্রচণ্ডভাবে টান ধরে থাকার অনুভূতি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। যার হয়েছে কেবল সে-ই বোঝে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই আক্রান্ত পেশি টানটান করার চেষ্টা করুন। পা সোজা টানটান রেখে বসা অবস্থায় পায়ের আঙুলগুলো নিজের দিকে আনতে চেষ্টা করুন। এর ফলে পায়ের পেশি টানটান হবে। তীব্র ব্যথায় পা নাড়াতে না পারলে পায়ের আঙুলগুলো হাতের সাহায্যে নিজের দিকে টেনে আনতে চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে কয়েকবার এভাবে চেষ্টা করার পরও আরাম না পেলে কুসুম গরম পানি কাজে লাগাতে পারেন। উষ্ণতা পেলে পায়ের ব্যথার তীব্রতা কমে আসতে থাকে। এ ছাড়া আক্রান্ত স্থানে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করলেও উপকার পেতে পারেন।
কারণ :
শরীরের যেকোনো একটি মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে, আকস্মিক নড়াচড়া, ভারি কিছু উঠানোর সময় বেকায়দায় কোনো পেশিতে টান পড়া ইত্যাদি কারণে মাংসপেশি চাপ পড়ে। দুশ্চিন্তা থেকেও মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের যেমন পানি কম খাওয়া, শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব ইত্যাদি কারণেও মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
শরীরের কোন মাংসপেশিতে টান পড়বে তা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপর। যারা দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারে কিংবা চেয়ারে বসে কাজ করেন কিংবা লম্বা সময় যানবাহন চালান, তাদের কাঁধ, ঘাড়, পিঠের মাংসপেশিতে টান পড়ার আশঙ্কা বেশি। খেলোয়াড়দের হাত ও পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ার ঝুঁকি থাকে।
মাংসপেশিতে টান পড়ার দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সম্পর্কে ডা. মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান বলেন, “পেশির টান পুরোপুরি উপশম না হলে ওই পেশিতে ‘নডিউল’ তৈরি হতে পারে। মাংসপেশির একটি অংশ স্থায়ীভাবে সংকুচিত হয়ে যাওয়াকে নডিউল বলা হয়। এই নডিউলের কারণে হাড় ও পেশির মধ্যকার সমন্বয় নষ্ট হয়। ফলে হাড়ের জোড়ায় ব্যথা হতে পারে। বয়স বেশি হলে আর্থ্রাইটিসের জটিলতা দেখা দিতে পারে।”
মাংসপেশিতে টান লাগা বন্ধে যা করবেনঃ
১. দিনের বেলায় যখন পায়ে কোনো ব্যথা থাকে না, তখন কাফ মাসল টানটান করার ব্যায়াম অভ্যাস করুন। সারা দিনে দুই থেকে তিন বার, প্রতি বেলায় পাঁচ মিনিট সময় দিন এই ব্যায়ামে। শেষবার ব্যায়ামটি হতে পারে শোয়ার আগে, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। কিছুদিন পর সারা দিনে এক থেকে দুই বার সময় দিলেই সমস্যা দূরে থাকে।
২. ভালো মানের জুতা ব্যবহার করুন, যাতে হাঁটার সময় পায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। শোয়ার আগে কিছুটা সময় হালকা হাঁটাচলা করুন, কিংবা স্থির সাইকেলে ব্যায়াম করতে পারেন কয়েক মিনিট।
৩. শোয়ার সময় পায়ের নীচে ভারী কম্বল বা ভারী চাদর দিয়ে ঘুমাতে পারেন। মানে পায়ের নিচে ব্যালেন্স করে একটু উচুঁ করে এই কম্বল বা চাদর ব্যবহার করতে পারেন। এর কারণে আপনার পা এবং শরীরের মধ্যে একটা ব্যালেন্স হবে। যার ফলে কারো পায়ে যদি পানি থাকে বা মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা থাকে তা কমে যাবে। তবে প্রতিদিন পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।