ঘাড় ব্যথা নিরাময়ে যা করবেন -ডা. মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘাড় ব্যথা একটি মারাত্মক সমস্যা যার দরুন আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অনেক ধরনের অসুবিধা হয়। শুধু তাই নয়, ঘাড় ব্যথার সঠিক চিকিৎসার অভাবে আমাদের মধ্যে অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের পঙ্গুত্ব, বিকলঙ্গ এবং প্যারালাইসিসও হতে পারে। ঘাড় ব্যথা একটি সাধারণ অভিযোগ। বয়স বাড়লে অনেকেই ঘাড় ব্যথায় ভুগে থাকেন। ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করেই ঘাড়ের একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা, কিংবা কাজ করতে করতে হঠাৎ ঘাড়ের একদিকে প্রবল টান, কিছুতেই ঘাড় ঘোরানো যাচ্ছে না। এই রকম সমস্যায় অনেকেই পড়েছেন। এর কারণ হিসেবে হতে পারে অনেক কিছু। দুর্বল দেহভঙ্গির কারণে ঘাড়ের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। যাঁরা ঘাড় বাঁকিয়ে কম্পিউটারে কাজ করেন কিংবা লেখার টেবিলে কুঁজো হয়ে বসেন, তাঁদের এ সমস্যা বেশি হয়। ঘাড়ে ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে, যেমন সেকোনো ধরনের আঘাত লাগা, পজিশনাল অর্থাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ব্যথা বা খারাপ পজিশনে ঘুমিয়ে পড়া, হাড়ের ইনফেকশন, অস্টিওপরোসিস, টিউমার, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ইত্যাদি। তবে সাধারণত বয়স বাড়লে ঘাড়ে ব্যথা সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের জন্য বেশি হয়। যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি তাদের তাদের মধ্যেই এ রোগ খুব বেশি দেখা যায়। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ঘাড়ের দুই হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থির বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে হয়। এ ছাড়া অস্টিও আর্থ্রাইটিস ঘাড় ব্যথার একটি সাধারণ কারণ।

যদি ঘাড় ব্যথার সঙ্গে বাহু কিংবা হাতে অবশ ভাব দেখা দেয় কিংবা হাতের শক্তি কমে যায় অথবা কাঁধ ব্যথা করে কিংবা ব্যথা হাতের দিকে নামে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থী কিংবা কর্মজীবী, প্রায় সবারই ঝুঁকি আছে ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার কিংবা ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার। শোয়া-বসার অবস্থানের সমস্যা বা ‘ব্যাড পশ্চার’, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, একটানা ঘাড় বাঁকা করে স্মার্টফোন চালানো ইত্যাদি অসংখ্য কারণ আছে এই ঘাড় ব্যথা হওয়ার পেছনে। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পেশিতে টান পড়া ইত্যাদিও ঘাড় ব্যথা হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ।

ঘাড় ব্যথা সাধারণত দুই ধরনের।

  • ‘অ্যাকিউট’ বা স্বল্প সময়ের জন্য
  • ‘ক্রনিক’ বা দীর্ঘমেয়াদী।

যে ধরনেরই হোক না কেনো ব্যথা তীব্র হলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসময় পরামর্শ দেবেন কিছু ব্যায়ামের। দীর্ঘমেয়াদী ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় রিহেব-ফিজিও অপারেশন বিহীন একটি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। ব্যথা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঘাড়ের পেশির স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি বাড়ায় রিহেব-ফিজিও এর মাধ্যমে।

উপসর্গ:

  • ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
  • ব্যথা অনেক সময় হাতের দিকে ছড়িয়ে পড়া।
  • ঘাড়ের ব্যথাসহ হাতের আঙুল ঝিনঝিন করা।
  • ঘাড়ে ব্যথাসহ হাত বা হাতের আঙুল অবশ অবশ ভাব হওয়া।
  • ঘাড় নড়াতে না পারা এবং ঘোড়ালে বা পেছনে বাঁকা করলে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • ঘাড়ের মাংসপেশি কামড়ানো।
  • ঘাড়ের পেছনের ব্যথা মাঝে মাঝে শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে যায়, যেমন কাঁধে অথবা মাথার পেছনের দিকে।

চিকিৎসা, প্রতিকার ও উপদেশ:

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস রোগটি ভালো হাওয়ার রোগ নয়। ভালো থাকার রোগ। তাই এ রোগের চিকিৎসায় রোগীর সহযোগিতা আকান্ত প্রয়োজন। এ রোগে ভালো থাকতে হলে-

  • ব্যথা বেশি হলে ব্যথা উপশমকারী ওষুধ খাওয়া যেতে পারে(চিকিৎসকের পরামর্শে)।
  • অনেক সময় রোগীকে মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।
  • সবক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সঠিক নিয়মনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

কিছু নিয়ম মেনে চলা:

  • ঘাড়ে গরম পানির সেঁক নিতে পারেন।
  • কম ওজনের সার্ভাইক্যাল ট্রাকশন নেওয়া যেতে পারে।
  • ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা থাকা অবস্থায় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করে ঘাড়কে বিশ্রাম দিতে হবে।
  • ঘাড়ের কিছু কার্যকরী ব্যায়াম রয়েছে যা ঘাড় ব্যথায় খুবই উপকারী।
  • ডাক্তারের পরামর্শ কিছু ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

 ঘাড় ব্যথায় কিছু পরামর্শ:

  • ফোমের বিছানায় ঘুমাবেন না।
  • যেকোনো এক কাত হয়ে ঘুম থেকে উঠবেন।
  • ঝুকেঁ কোনো কাজ করবেন না।
  • গোসল করার সময় সাবধানে করবেন।
  • টিউবওয়েল চাপবেন না।
  • ছোট নরম একটা বালিশ রোল ব্যবহার করবেন।
  • চলাফেরার সময় সর্বদা কলার ব্যবহার করুন।
  • ঘাড় সোজা রেখে দাঁড়িয়ে রান্না করবেন। প্রয়োজন হলে চেয়ারে বসবেন।
  • চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
  • ঘাড় পেছনের দিকে বাঁকিয়ে কোনো কাজ করবেন না।
  • কলার পরা অবস্থায় নিজে গাড়ি চালাবেন না।
  • ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় ব্যায়াম করবেন না।
  • কোনো প্রকার মালিশ করবেন না।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।

উপদেশ গুলো মেনে চললে ঘাড়ে ব্যথা থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভালো থাকবেন এবং বারবার ঘাড়ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

ডা. মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান

বাত ব্যথা প্যারালাইসিস ডিসএবিলিটি ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ

ডিপিআরসি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব লি:

১২/১ রিং-রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭, (শ্যামলী ক্লাব মাঠ সমবায় বাজারের উল্টো দিকে)

সিরিয়ালের জন্য ফোন: ০৯ ৬৬৬ ৭৭ ৪৪ ১১ অথবা ০১৯৯-৭৭০২০০১

আরএম/ ২ জুন, ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12/1 Ring Road, Shyamoli, Dhaka

09666 77 44 11

dprchospital@dprcbd.com